অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা (Arjuna Bark Powder Benefits)

অর্জুন গাছ, যাতে পেয়ারা গাছের অনুরূপ পাতা রয়েছে কিন্তু এটি আকারে অনেক বড়, এর বৈজ্ঞানিক নাম হল টার্মিমিনেলিয়া অর্জুন। বিভিন্ন অঞ্চলে, এটি ধাওয়াল, কুকুভ এবং নাদিসারজ নামেও পরিচিত। অর্জুন গাছ চিরহরিৎ বৃক্ষ। প্রধান ঔষধি গাছের মধ্যে একটি অন্যতম গাছ হল অর্জুন গাছ।

এটি প্রাচীন কাল থেকে হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছে। অর্জুনের গাছের ছাল পাউডার, ডিকোশন, স্কুর ইত্যাদি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। অতএব আমাদের অর্জুন গাছের ছালের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কী কী তা জানা দরকার।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা (Arjuna Bark Powder Benefits)

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুনের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ

অর্জুন গাছের ছাল বেশ উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আসলে তার বাকল, লিপিড ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে কোলেস্টেরল হ্রাস করে। এই ছালের সেবন রক্ত প্রবাহের বাধা দূর করে। এর জন্য, অর্জুন গাছের ছালের এক চামচ পাউডার, দুই গ্লাস জলে অর্ধেক রয়ে যাওয়া পর্যন্ত গরম ক’রে সকালে ও সন্ধ্যায় পান করা উচিত। এই ভাবে বন্ধ ধমনী খুলবে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পাবে।

উন্নত চুলের জন্যঃ

চুলের বৃদ্ধির জন্য আমরা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারি। মাথার চুলের মধ্যে অর্জুনের গাছের ছাল এবং হেনার মিশ্রণ চুলে লাগানোর ফলে চুল সাদা থেকে কালো হয়। একই সাথে এটা চুল শক্তিশালী করে।

কাশির উপশমেঃ

শুকনো অর্জুনের গাছের ছালের পাউডার, তাজা সবুজ ছোট পাতার রসের সাথে মিশিয়ে দিয়ে আবার শুকিয়ে নিন। এভাবেই সাত বার মেশানোর পর যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে চূর্ণ প্রস্তুত করা হয়। এর সাথে মধু দিয়ে রোগীকে সেবন করালে তিনি আরাম অনুভব করেন।

মেদ দূর করতেঃ

অতিরিক্ত মেদ নিয়ে সমস্যায় ভোগা মানুষ প্রত্যহ সকাল, সন্ধ্যায় অর্জুনের গাছের ছালের মিশ্রণ পান করলে তাঁদের সমস্যা কমে যেতে পারে অনেকটাই। এটি এত দ্রুত কাজ করে যে মাত্র এক মাসের মধ্যেই আপনি আপনার মেদের উপর এর প্রভাব অনুভব করতে পারবেন।

মধুমেহের (সুগার) উপশমেঃ

মধুমেহ রোগীরা অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে তাদের সমস্যাও শেষ করতে পারে। এর জন্য অর্জুন গাছের ছালের পাউডার, দেশী জাম বীজের চূর্ণ সমান পরিমাণে মিশিয়ে ঘুমের আগে উষ্ণ জল সহযোগে পান করুন। দ্বিতীয় বিকল্প হল অর্জুনের গাছের ছাল, কদম গাছের ছাল, জামুন গাছের ছাল ও পার্সলে এক সমান পরিমাণে মিশিয়ে এবং ভাল করে গুঁড়িয়ে পাউডার বানিয়ে নিন। ডিকোকেশনের জন্য অর্ধ লিটার জল যোগ করুন এবং সকালে 3 সপ্তাহ ধরে এই মিশ্রণটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে মধুমেহ থেকে পরিত্রাণ করতে পারে।

ত্বকের জন্যঃ

অর্জুন গাছের ছালের প্রভাব অনেক ত্বকের সমস্যা দূর করতে কার্যকর। অর্জুন গাছের ছাল, বাদাম, হলুদ এবং কর্পূর সমান পরিমাণ মিশিয়ে, পিষ্ট করে, ত্বকের উপর প্রয়োগ করলে, মুখের সমস্ত বলিরেখা দূর হয় এবং মুখের ত্বক উজ্জ্বল হয়ে।

মুখের ফোস্কার চিকিৎসায়ঃ

মুখের ফোস্কার দ্বারা বিরক্ত ব্যক্তি অর্জুনের ছাল ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য, নারকেল তেলের সাথে অর্জুনের ছালের চূর্ণ যোগ করে তা আপনার মুখের ফোস্কার উপর প্রলেপ রূপে লাগালে আপনি কষ্ট থেকে অবশ্যই উপশম পাবেন। শুধু তাই নয়, এই মিশ্রণ অল্প গুড় সহযোগে সেবন করলে জ্বরের থেকেও ত্রাণ পাওয়া যায়।

প্রস্রাবের বাধা দূর করতেঃ

অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে তৈরি পানীয়, প্রস্রাবের বাধা দূর করে। এ জন্য, অর্জুনের গাছের ছাল পিষ্ট করুন এবং দুই কাপ জলে ফোটান। যখন পানি অর্ধেক হয়ে আসবে, তখন তা ঠান্ডা করতে দিন। এরপর ঠান্ডা হওয়ার পরে রোগীকে পান করান। দিনে একবার খাওয়ানো হলে, এটি প্রস্রাবের বাধা দূর করে।

প্রদাহ হ্রাস করাঃ

অর্জুন গাছের বাকলও কিন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রেখে থাকে। এর জন্য, অর্জুনের গাছের ছাল পিষ্ট করে তার মিহি গুঁড়ো খরিপাক পদ্ধতিতে ৫ থেকে ১০ গ্রাম পরিমাণে রোগীকে খাওয়ানো হলে, কার্ডিওভাসকুলার রোগের পাশাপাশি হৃদরোগের ঘটনা হ্রাস পায়। এ ছাড়া, প্রায় ১ থেকে ৩ গ্রাম পরিমাণ পাউডার খেলে প্রদাহ হ্রাস পায় এবং তার সাথে সম্পর্কিত সমস্যাও চলে যায়।

হৃদয়ের ব্যাধির নিরাময়েঃ

অর্জুন গাছের ছাল অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, প্রদাহ ইত্যাদির মতো হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যা দূর করতে সহায়ক। এটি স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। অর্জুন গাছের ছালের সাথে বন্য পেঁয়াজ একই পরিমাণ মিশিয়ে চূর্ণ বানান এবং এই চূর্ণের অর্ধেক চা চামচ হার্টের রোগীকে দৈনন্দিন দুধ সহযোগে পান করানো হলে রোগীর হৃদয়ের পেশি শক্তিশালী হবে। এটা হার্ট ব্লকেজের প্রতিরোধের জন্যও উপকারী। খাবার খাওয়ার পর প্রায় দুই চা চামচ বা প্রায় ২০ মিমি অর্জুনারিষ্ট অর্ধেক কাপ জলে মিশিয়ে দুই তিন মাস পান করলে প্রায় সব রকমের শারীরীক সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতাঃ

  • অর্জুন গাছের ছাল গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষতি করে, তাই তাঁদের এই ছাল ব্যবহারে ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।
  • সুগার রোগীদেরও অর্জুন গাছের ছাল যথেষ্ট সাবধানে ব্যবহার করা উচিত।
Shopping Cart
Scroll to Top
Scroll to Top